চুয়াডাঙ্গায় ৪টি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মধ্যে ৩টি’তেই নেই সাব-রেজিষ্টার, এ ক্ষেত্রে জেলার ৪টি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কার্যক্রম চলছে মাত্র একজন সাব-রেজিষ্ট্রার দিয়ে । জমি-জমা বিক্রিতে চরম অচলাবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে, ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এম নাফিজ বিন জামান চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা সাব-রেজিষ্টার হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও দলিল লেখকদের অনুরোধে অন্য ৩ উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে সাব-রেজিষ্টার সংকটে জেলার চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগরের উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কার্যক্রম সম্পুর্ন বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এর ফলে স্ব-স্ব অফিস গুলোতে দৈনন্দিন স্থানীয় পর্যায়ের জমি রেজিষ্ট্রি কার্যক্রম সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে এলাকার জমি ক্রেতা-বিক্রেতা দলিল লেখক সহ সেবা প্রত্যাশী মানুষ পড়েছেন নানারকমের হয়রানী ও বিড়ম্বনার মধ্যে। সেই সাথে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। দীর্ঘদিন যাবৎ এমন সমস্যা চলে আসলেও তা সমাধানে কার্যকর কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছেনা সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ বা কর্তৃপক্ষকে।
জেলা রেজিষ্টারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা ও লকডাউনের প্রকোপের কারনে প্রায় ৩ মাস একটানা বন্ধ ছিল চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল অফিসের রেজিষ্ট্রি কার্যক্রম। এর পরে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও সংকট কাটেনি জেলার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস গুলোতে।
লকডাউন পরবর্তী সময়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা সাব-রেজিষ্টার মামুন বাবরকে সেখান থেকে ক্লোজ করে জেলা রেজিষ্টার অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। সদর উপজেলা সাব-রেজিষ্টার স্মৃতিকনা দাস ও জীবননগর উপজেলা সাব-রেজিষ্টার মাসুদুর রহমান বদলী জনিত কারনে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। সেই থেকেই চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও জীবননগরের উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস গুলি সাব-রেজিষ্টার শুন্য অবস্থায় রয়েছে।
এর মাঝে এমন জনগুরুত্বপূর্ন অফিস গুলিতে কোন মতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন মাত্র ১০ সেপ্টেম্বর সদ্য যোগদান করা দামুড়হুদা উপজেলা সাব-রেজিষ্টার এম নাফিজ বিন জামান। তিনি একাই জেলার ৪টি উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসগুলি সামাল দিতে যেমন হিমসিম খাচ্ছেন, ঠিক তেমনি ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন ভূক্তভোগী মানুষ।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহের প্রতি রবিও সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায়, দামুড়হুদা উপজেলায় মঙ্গল ও বুধবার, আলমডাঙ্গা উপজেলায় রবি,সোম ও মঙ্গলবার, এবং সপ্তাহের ৫ দিনই জীবননগর উপজেলায় জমি রেজিষ্ট্রি কার্যক্রম চলার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সাব-রেজিষ্টার সংকট কালীন সময়ে দামুড়হুদা উপজেলা সাব-রেজিষ্টার এম নাফিজ বিন জামান একাই জেলার ৪ উপজেলায় ১দিন করে নির্ধারন করে জমি রেজিষ্ট্রি কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস গুলোতে জনবল সংকটের কারনে ও কাজের পরিধি বেশি হওয়ায় দিনরাত সমানতালে কাজ করেও অনেক কাজ অসম্পূর্ন হয়ে পড়ে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে এই ৩ উপজেলার কার্যক্রম। মাঝে মধ্যে দামুড়হুদা সাব-রেজিষ্টার ঐ ৩ উপজেলাগুলোতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও সেটা সবসময় সম্ভব হয়না। একারনে জেলার রেজিষ্ট্রি অফিস গুলির কার্যক্রম একবারেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
ভূক্তভোগীরা বলছেন, টানা একমাস বন্ধ রয়েছে এ সব জনগুরুত্বপূর্ন অফিসের কার্যক্রম। ফলে প্রতিদিনের জমি রেজিষ্ট্রি সহ এ সংক্রান্ত কার্যক্রম আটকে রয়েছে মাসের পর মাস। এ সব অফিসের কর্মচারি ও দলিল লেখকরা জানান, টানা ৩ মাসের অচলাবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। তারা আরো জানান, করোনা ও লকডাউনের কারনে একটনা ৩ মাস জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ ছিল আর এখন টানা ১ মাস বন্ধ রয়েছে সাব-রেজিষ্টার না থাকার কারনে। ফলে জেলার সহস্রাধিক দলিল লেখকের অধিকাংশই অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। অপরদিকে এ খাত থেকে সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা রেজিষ্টার শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার সাব-রেজিষ্টার সংকটের বিষয়টি নিবন্ধন অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। বদলী প্রক্রিয়ার কাজ করেন আইন মন্ত্রনালয়। সেখান থেকে বদলী আদেশ না হলে আমাদের ৩টি উপজেলা কর্মকর্তা শুন্যই থাকবে। তবে আশা করা যাচ্ছে অচিরেই এই শুন্য ৩টি সাব-রেজিষ্টারের পদ গুলি পূরন হতে পারে।